সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

আমাদের সাহিত্য জগতের পক্ষ্য থেকে সবাইকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা

আসুন সবাই ভালবাসি . . .



আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস। যদিও ভালবাসা কোন দিন-দিবসের জন্য নয়। এটা সারাজীবনের জন্য, প্রতিটা মূর্হুত আর ক্ষণের জন্য। আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্লভ জিনিস হল ভালবাসা। সত্যিকারের ভালবাসা। হ্যাঁ ভালবাসা মিথ্যাকারেরও আছে। যা এসব দিন-দিবসকে ঘিরে ছটফট করে। আর না পেলে গর্জে ওঠে এসিড,অস্ত্র আর তার সাথে মাঝে মাঝে পুরুষ দন্ডের দ্বারা! ভালবাসার জন্য কেউ কাঁদে আবার কেউবা কাঁদায়। তারপরও ভালবাসা শুধুই ভালবাসা। যার জন্য তাজমহল গড়া যায়। সাগর বাঁধা যায়। আর জীবন উৎসর্গ করাতো যেন সামান্য ব্যাপার। তারপরও ভালবাসা শুধু ভালবাসার জন্য। সবাইকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। আর যে সব তৃষিত হূদয় ভালবাসার জন্য আকুল বা এ বসন্ত আগমনে যারা ভালবাসার সোনার হরিণ হারিয়েছেন তাদের সবার জন্য রইল সমবেদনা। শুধু একটা মেয়ে বা ছেলেকে ভালবাসতে হবে কে বলল? আসুন ভালবসার হাত বাড়াই তাদেন দিকে যাদের ভালবাসার কেউ নেই। যাদের পাশে দাড়াবার কেউ নেই।
আসুন ভালবাসি দেশকে, দেশের অসহায় মানুষকে। যাদের ভালবাসার কেউ নেই। এই হোক ভালবাসার দিনের অঙ্গীকার . . .
ইতিহাস ও প্রথা :
ভ্যালেন্টাইন'স ডে উদযাপন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারী ছিল রোমান দেবদেবীদের রানী জুনোর সম্মানে পবিত্র দিন। রোমানরা তাকে নারী ও ব্বিাহের দেবী বলে বিশ্বাস করত। দিনটি অনুসরণ করে পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারী পালিত হতো লুপারকেলিয়া উৎসবের বিশেষ ভোজ। সে সময় তরুণ এবং তরুণীদের জীবনযাপন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। সম্রাট কডিয়াসের শাসনামলে রোম কয়েকটি জনবিরোধী এবং রক্তয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। হিংস্র প্রকৃতির কডিয়াস সে সময় তার সেনাবাহিনীতে যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য ভর্তি না হওয়া নিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছিলেন। রোমান পুরুষদের তাদের পরিবার ও ভালবাসা ত্যাগ করে যুদ্ধে না যাওয়াক্‌ে এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছিলেন তিনি। ফলে কডিয়াস সমগ্র রোমে সব ধরনের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সে সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমের একজন ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি এবং সেন্ট ম্যারিয়াস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দিতেন এবং বিবাহিত যুগলদের সহযোগিতা দিতেন। এ কারণে রোমের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করেন।
ভ্যালেন্টাইন বন্দি থাকা অবস্থায় অনেক তরুণ তাকে দেখতে যেত এবং কারা করে জানালা দিয়ে তার উদ্দেশ্যে চিরকুট ও ফুল দিয়ে তার উদ্দেশ্যে লেখা চিরকুট ও ফুল দিয়ে তাদের ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত। হাত নেড়ে তাকে জানাত যে, তারা 'যুদ্ধ নয়, ভালবাসায় বিশ্বাসী।' এদের মধ্যে একজন ছিলেন কারারীর মেয়ে। তার বাবা তাকে ভ্যালেন্টাইনের সাথে সাৎ করতে এবং তার সাথে কথা বলতে সুযোগ করে দিত। মেয়েটি তাকে তার প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা, কডিয়াসের নির্দেশ অমান্য করে তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দেয়া এবং ভালোবাসায় তার সমর্থনের কথা জানায়। এক সময় তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করে হত্যার দিনে তিনি মেয়েটিকে তার বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। এতে তিনি লিখেছিলেন, 'লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন'। বিচারকের নির্দেশ অনুসারে সে দিনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এ আত্মত্যাগের দিনটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে লুপারকেলিয়া অনুষ্ঠানের দিন ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেন। পরে এটি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে 'ভ্যালেন্টাইন'স ডে' নামে দ্রুত পরিচিতি লাভ করে। কালের ধারাবাহিকতায় ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে এবং সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাহারি ফুল, কবিতা ও ছোটখাট উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে দিনটি ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিস এস্থার হাওল্যান্ড প্রথম ভ্যালেন্টাইন কার্ড পাঠানোর প্রচলন করেন।
মিথ ও কুসংস্কার :
আজ থেকে শতবর্ষ আগে ব্রিটেনে ছোট শিশুরা দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গান গেয়ে দিনটি উদযাপন করত। ওয়েলসে কাঠের তৈরি চামচের ওপর হৃদপিন্ড, তালা, শেকল প্রভৃতির নকশা খোদাই করে এ দিনে উপহার দেয়া হত। এর মানে ছিল 'ইউ আনলক মাই হার্ট'। কোথাও আবার এ দিনে তরুণীরা রোদে একটি বাটিতে পরিষ্কার পানি রেখে তার ওপর চেয়ে থাকত। ধারণা করা হত, যার ছবি ওই পানিতে ভেসে উঠবে সে-ই হবে তার কাঙ্তি ভ্যালেন্টাইন। কোথাও ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে তরুণ-তরুণীরা তাদের জামার হাতায় কাঙ্তি ভালবাসার মানুষটির নাম লিখে সপ্তাহজুড়ে ঘুরে বেড়াত। তারা ধরেই নিতো, এর ফলে সহজেই কাছে পাবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে।
কোনো কোনো দেশে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে অবিবাহিত ছেলেরা মেয়েদের নতুন পোশাক উপহার হিসেবে পাঠাত এবং মেয়েটি ওই পোশাক গ্রহণ করলে ধরে নেয়া হতো, মেয়েটি তাকে বিয়ে করতে রাজী আছে। ওইসব দেশে কিছু লোকদের ভ্যালেন্টাইনের ওপর বিশ্বাস আরো একধাপ এগিয়ে। তারা বিশ্বাস করত, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে যদি কোন মেয়ে তার মাথার ওপর একটি ফিতা উড়ে যেতে দেখে তাহলে তার বিয়ে হবে নাবিকের সাথে, যদি সে একটি চড়ুই পাখি দেখে তবে তার বিয়ে হবে একজন দরিদ্র লোকের সাথে, কিন্তু সে হবে খুবই সুখী। আর যদি সে সোনালী রঙের মাছ দেখে তবে তার বিয়ে হবে একজন প্রভাবশালী ধনাঢ্য লোকের সাথে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন সব হাজারো প্রথা, কুসংস্কার ও মিথ জড়িয়ে আছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের কাহিনীকে ঘিরে। ভালোবাসা সব সময়ই সর্বজনীন। আর ভালোবাসার জন্য শুধু ভ্যালেন্টাইন কেন, যুগে যুগে পৃথিবীর বহু দেশে অসংখ্য মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন। জয় হোক ভালোবাসার।

কোন মন্তব্য নেই: